The Fermi Paradox : Searching for Everyone? (Ep - 1)
বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের কতটুকু জানেন আপনি? ধারনা করতে পারবেন কি? কখনো রাতে ছাঁদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভেবেছেন কি, চোখ যতদূর যায়, এ দৃশ্যমান লক্ষ লক্ষ তারাগুলোর একটির মধ্যেও কি জীববের অস্তিত্ব নেই? হয়তো ভেবেছেন, হয়তো ভাবেননি। হয়তোবা ভাবতে ভাবতে কখন যে ভাবনার সাগরে ঘুমিয়ে গিয়েছেন নিজেও খেয়াল করেননি। পরদিন সকালে আবার সব ভাবনা মিলিয়ে যায় দৈনন্দিন জীবনের টানাপোড়নে। তবে আজ একটু থেমে যান সেই রাতের ভাবনাগুলোতে। তারা নয়, তবে শুধুমাত্র আমাদের এই গ্যালাক্সির গ্রহসমূহ ও সোলার সিস্টেমসমূহের কথাই ভাবুন। ভেবে দেখুন সেই সম্ভাবনাটুকু, যেখানে অন্য গ্রহেও আমাদের মতোই ইন্টেলেকচুয়াল জীবের বসবাস রয়েছে!
ফার্মি প্যারাডক্সের ধারনা
এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল লাইফ বা পৃথিবীর বাহিরের কোনো সভ্যতা বা সহজ কথায় এলিয়েনদের উপস্থিতি আছে কি নেই এমনই একটি আর্গুমেন্টের দরুন তৈরি হওয়া এই প্যারাডক্সটির নামকরন করা হয় ইতালিয়ান-আমেরিকান বিজ্ঞানী ইনরিকো ফার্মির নামানুসারে। ১৯৫০'র সময়ে তিনিই প্রথমবারের মতো গানিতিক সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে এলিয়েনদের এক্সিস্টেন্স আছে কি নেই এরূপ একটি প্রশ্ন তোলেন।
ধাপে ধাপে ১৯৭৫সালে মাইকেল এইচ হার্ট নামক একজন আমেরিকান অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট ফার্মি প্যারাডক্সের উপর বেশকিছু আশাবাদী সম্ভাবনা তুলে ধরবার চেষ্টা করেন। সম্ভাবনাসমূহ হলোঃ
- আমাদের মিল্কিওয়েতে সূর্যের মতো বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে।
- এক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনাও রয়েছে যে, পৃথিবীর মতো গ্রহের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব।
- কিছু গ্রহে হয়তো ইন্টেলেকচুয়াল লাইফের অস্তিত্বও রয়েছে; যারা ইন্টারস্টেলার ট্রাভেলও করতে সক্ষম।
- কিন্তু ইন্টারস্টেলার ট্র্যাভেল করে সম্পূর্ণ মিল্কিওয়ে প্রদক্ষিনের ক্ষেত্রে কয়েক মিলিয়ন বছর লেগে যেতে পারে।
- এছাড়াও এমন অনেক নক্ষত্র আছে যা সূর্যের থেকেও কোটি কোটি বছর পুরোনো, যা অনেক সময় সাপেক্ষ।
যদিও শুধুমাত্র ফার্মিই নয় যে এই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাশিয়ান বিজ্ঞানী কন্সট্যান্টিন সিওলকোভোস্কি ১৯৩৩ সালে তার একটি আনপাবলিশড ম্যানিউস্ক্রিপ্টে কিছু কথা বলে গিয়েছিলেন এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল লাইফের ব্যাপারে। তিনি এ বিষয়সমূহ এবং স্পেস ট্র্যাভেলিং বিশ্বাস করতেন। তিনি বলেছিলেন, "যদি এলিয়েনসদের অস্তিত্ব থেকেই থাকে তাঁরা কেন আমাদের সাথে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করছে না? বা পৃথিবী ভ্রমনে আসছে না?" অতঃপর তিনি এও জানান যে, হয়তো মানবসভ্যতা সেসকল জীবের সাথে যোগাযোগ করবার মতো ইন্টেলেকচুয়াল এখনো হয়ে উঠেনি। এবং এখানে তিনি আরো একটি থিওরি নিয়ে আসেন যা "দ্যা জু হাইপোথিসিস" নামেও পরিচিত।
এবার যদি আমরা আরো একটু ভেতরে প্রবেশ করি তবে এমন আরো দুটি থিওরি পাই যা ফার্মি প্যারাডক্সের যৌক্তিকতা আরো সহজভাবে তুলে ধরবার চেষ্টা করে। সেগুলো হচ্ছে,
- দ্যা ড্রেক'স ইকুয়েশন
- দ্যা গ্রেট ফিল্টার
এছাড়াও আমরা একটি গানিতিক সম্ভাবনা খোজারও চেষ্টা করবো।
দ্যা ড্রেক'স ইকুয়েশন
দ্যা ড্রেক'স ইকুয়েশন হচ্ছে একটি প্রোবাবিলিটি আর্গুমেন্ট যার মাধ্যমে আমাদের গ্যালাক্সির মধ্যে এক্সট্রাটেরিস্ট্রয়াল সভ্যতাসমূহের ধারনা পাওয়া যায়। এটি কোনোপ্রকার সংখ্যাগত ধারনা নয়, শুধুমাত্র একটি সাইন্টিফিক পসিবিলিটি দেখায় যে, এরকম সভ্যতা থাকা সম্ভব। যদিও ১৯৬১ সালের তৈরি করা ফ্র্যাংক ড্রেকের এই ইকুয়েশনের যথেষ্ট পরিমান সীমাব্ধতা রয়েছে, তবুও অন্যান্য থিওরির তুলনায় এই ইকুয়েশন আমার অনেকক্ষেত্রেই ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখায়।
ড্রেক'স ইকুয়েশন
N = R*.fp.ne.fl. fi .fc .L
এখানে,
N= Number of civilization in our galaxy with whom communication can be possible
R∗ = Average rate of star formation of our galaxy
fp = the fraction of those stars that have planets
ne = the average number of planets that have potential to support life per star that has planets
fl = the fraction of planets that could support life or have the possibility to develop life at some point
fi = the fraction of planets with life that actually go on to develop intelligent civilization
fc = the fraction of civilizations that develop a technology that releases detectable signs of their existence into space
L = the length of time for which such civilizations release detectable signals into space
হিসাব
এখানে যদি ফলাফল N<<1 হয় তবে ধরে নিতে হবে সম্পূর্ণ গ্যালাক্সিতে শুধুমাত্র আমরাই একমাত্র বসবাস করছি। অপরপক্ষে, N>>1 হলে এরূপ সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, গ্যালাক্সিতে আমরা ছাড়াও এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল সিভিলাইজেশনের অস্তিত্ব রয়েছে। নিম্নে বিভিন্ন লেটেস্ট আপডেটেড সার্ভে ও নাসার তথ্যানুযায়ী একটি হিসাব দেখানো হচ্ছেঃ
সর্বনিম্ন মানসমূহ
R∗ = 1.5–3 yr−1, fp · ne · fl = 10−5, fi = 10−9, fc = 0.2[Drake, above] , and L = 304 years
সুতরাং, N = 1.5 × 10−5 × 10−9 × 0.2 × 304 = 9.1 × 10−13
সর্বোচ্চ মানসমূহ
R∗ = 1.5–3 yr−1, fp = 1, ne = 0.2, fl = 0.13, fi = 1, fc = 0.2[Drake, above], and L = 109 years
সুতরাং, N = 3 × 1 × 0.2 × 0.13 × 1 × 0.2 × 109 = 15,600,000
জানা যায়, মহাবিশ্বে একমাত্র সভ্যতার উপস্থিতি অর্জনের জন্য একক 2.5×10−24 এর কম হওয়া প্রয়োজন। একইসাথে, গ্যালাক্সির একমাত্র সভ্যতার উপস্থিতি অর্জনের জন্য একক 1.7×10−11 এর কম হওয়া প্রয়োজন। তবে আমাদের গ্যালাক্সির ফিগারেশন এমনিই সম্ভাবনা দেখায় যে, হয়তো এখানে অনেক সময় আগে এরূপ সিভিলাইজেশন গড়ে উঠেছিলো বা ভবিষ্যতে গড়ে উঠতে পারে।
দ্যা গ্রেট ফিল্টার
ফার্মি প্যারাডক্সের কন্টেক্সটে ব্যাখ্যা করলে, "দ্যা গ্রেট ফিল্টার" একটি ন্যাচারাল ইভ্যালিউশন। এর ব্যাখ্যা কিছুটা এমনভাবে দেয়া যায় যে, একটি সিভিলাইজেশন যখন উন্নতির এমনিই একটি পর্যায় পর্যন্ত পৌছে যায় যে, সেই উন্নতি তার সময়ের চেয়ে অনেকবেশি এবং যা অন্য কারো ক্ষতির কারণ হতে পারে সেক্ষেত্রে এমনকিছু বিপর্যয় চলে আসে, যা সেই উন্নতিকে লিমিটেড করে দেয়। উন্নতির সর্বোচ্চ পরিমাপক হিসেব করতে ১৯৬৪ সালে সোভিয়েত অ্যাস্ট্রোনমার নিকোলাই কারদাশেভ, কারদাশেভ স্কেলের প্রস্তাব রাখেন। এই স্কেল অনুযায়ী সভ্যতার উন্নতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়।
টাইপ ১ঃ যারা বা যে সভ্যতা তাদের গ্রহের সম্পূর্ণ শক্তি ও রিসোর্স ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
টাইপ ২ঃ যারা বা যে সভ্যতা তাদের সোলার সিস্টেমের সম্পূর্ণ শক্তি ও রিসোর্স ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
টাইপ ৩ঃ যারা বা যে সভ্যতা তাদের গ্যালাক্সির সম্পূর্ণ শক্তি ও রিসোর্স ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
এবার আপনাদের মধ্যে কিছু প্রশ্ন আসতে পারে -
পৃথিবী কোন টাইপের মধ্যে পড়ে?
পৃথিবী আপাতত কোনো টাইপের মধ্যেই পড়ে না। মানবসভ্যতা মাত্র টাইপ ১ এর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা এখনো আমাদের গ্রহের সকল রিসোর্স ব্যবহার করতে পারিনি। যা করতে এখনো ১০০ থেকে ২০০ বছর সময়ের প্রয়োজন।পৃথিবীতে কবে গ্রেট ফিল্টার আসতে পারে?
দেখুন, পৃথিবীতে বর্তমান মানবসভ্যতা ছাড়াও আরো বেশ কিছু বছর আগেও উন্নত সভ্যতা অস্তিত্ব ছিলো। যেমন - মায়ান সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, আরব সভ্যতা, পুরানো গ্রিক সভ্যতা ইত্যাদি। বর্তমানে যুগে এসকল সভ্যতা কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। আমরা এরূপ বলতে পারি না যে পৃথিবীতে গ্রেট ফিল্টার এসেছিলো কিনা। কিন্তু এও ছেড়ে দেয়ার মতো নয় যে, উক্ত সভ্যতাসমূহ তাদের সময় অনুযায়ী অনেক বেশি অ্যাডাভান্সড ছিলো। এছাড়াও, ডায়নাসর যুগের বিলুপ্তিও শক্তপোক্ত উদাহরন হিসেবে গ্রহনযোগ্য। হয়তোবা পৃথিবী গ্রেট ফিল্টারের খুবই নিকটে। অথবা পৃথিবীর উন্নতি সময়ের তুলনায় এখনো বেশি হয়নি, তাই গ্রেট ফিল্টার আসতে এখনো অনেক সময় বাকি। আবার, ধারনা করলে করাই যাই, প্রাচীন উন্নত সভ্যতার বিলুপ্তিসমূহ গ্রেট ফিল্টারেরই একটি ফলাফল!এই প্যারাডক্সের সাথে গ্রেট ফিল্টারেরই বা সম্পর্ক কি?
আরেকটু ধৈর্য ধরেন ভাই এর উত্তরে একটু পরে আসছি।
গানিতিক সম্ভাবনা
আমরা প্রথমে একটি ছোট পরিসর কাউন্ট করি। ধরুন, আমাদের মিল্কিওয়ে। আমাদের মিল্কিওয়ে তে প্রায় ১০০-৪০০বিলিয়ন নক্ষত্র আছে, সর্বনিম্ন ১০মিলিয়ন এবং সর্বোচ্চ ১০০বিলিয়ন সোলার সিস্টেম আছে যার মধ্যে ০.১% নক্ষত্রের গ্রহ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ১০০বিলিয়ন গ্রহ যার প্রায় ৫০বিলিয়ন বাসযোগ্য। এসকল বাসযোগ্য গ্রহের মধ্যে যদি আমরা ০.১% গ্রহ কাউন্ট করি তখনো আমরা ৫মিলিয়ন গ্রহ পাই যেখানে ধারনা করা যেতে পারে জীবনের অস্তিত্ব আছে। এবার পুরো ইউনিভার্সের কথা ভাবুন। পুরো ইউনিভার্সে আমাদের গ্যালাক্সির মতোই আরো বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি আছে এবং প্রতিনিয়তই ইউনিভার্স এক্সপ্যান্ড হচ্ছে, কোটি কোটি প্ল্যানেট তৈরি হচ্ছে এবং ধ্বংস হচ্ছে।
প্রশ্নটি এবার আপনার কাছে থাকলো, বিবেচনা করে দেখুন পুরো ইউনিভার্সে শুধুমাত্র পৃথিবীতেই কি মানুষের মতো ইন্টেলেকচুয়াল জীবের বসবাস রয়েছে?
1 comment