MULTIVERSE 2 - The Conclusion?

শুরুতেই বলে নিই, যে মুহূর্তে এই আর্টিকেল টি লিখছি, শরীরের তাপমাত্রা 103° F, নিরন্তর কাশি, মাথা ব্যথা। যেকোন প্রকারের ভুল, বানান ভুল ইত্যাদির জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।



যাই হোক, গত পর্বেই বলা হয়েছে মাল্টিভার্স কোন প্রমাণিত সত্য নয়। বরং মাল্টিভার্স হচ্ছে একটি তত্ত্ব মাত্র। মাল্টিভার্স এর ব্যাপারে এগোনোর আগে আমাদের নিজেদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে একটু জানতে হবে, আশা করি অনেকেই জানেন তবুও আমি সংক্ষেপে মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বটি একটু তুলে ধরছি।

Previous EP: Multiverse: Why to Believe It's Existence?

জর্জ এদুয়ার ল্যমেত্র্ যিনি ছিলেন বেলজিয়ামের একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং একই সাথে খ্রিস্টানদের ধর্মযাজক। ১৯২৭ সালে তিনি বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ফিল্ড ইকুয়েশন ব্যবহার করে ফ্রিডম্যান ইকুয়েশন ডেমনস্ট্রেট করেন এবং স্পাইরাল নেবুলার ক্রমাগত প্রত্যাবৃত্তির উপর ভিত্তি করে প্রস্তাব করেন যে মহাবিশ্ব একটি আদিম পরমাণু থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই প্রস্তাবটিই এখন বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ নামে পরিচিত। তিনি বলেন,

প্রসারণশীল বিশ্বকে যদি সময়ের সাথে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তবে একটা বিন্দুতে উপনীত হওয়া যাবে যেখানে মহাবিশ্বের সমগ্র ভর পুঞ্জীভূত ছিল।


জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবল ১৯২০ সালে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান যে আমাদের প্রতিবেশি ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা আমাদের থাকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি তাঁর ২.৫ মিটার হোকার টেলিস্কোপটির সাহায্যে এই পর্যবেক্ষণটি করেন। তিনি আরও পর্যবেক্ষণ করেন যে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান গ্যালাক্সিগুলো থেকে আগত আলোর লাল অপসারণ (Red Shift) হচ্ছে।

বলে রাখা ভালো ১৮৬৮ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম হাগিনস প্রমাণ করেন যে কয়েকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের বর্ণালীর ফ্রনহফার কালো রেখাগুলো সৌর বর্ণালীতে তাদের স্বাভাবিক অবস্থানের তুলনায় সামান্য লাল বা নীলের দিকে সরে যায়। এই লাল দিকে সরে যাওয়াকে লাল অপসারণ বা রেড শিফট এবং নীল দিকে সরে যাওয়াকে নীল অপসারণ বা ব্লু শিফট বলে।





১৮৪২ সালে আবার অস্ট্রিয়ান গণিতবিদ জোহান ডপলার দেখান যে, কোন উৎস যদি পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে আপেক্ষিক গতিতে থাকে এবং যদি উৎস পর্যবেক্ষকের দিকে আসে তখন উৎস হতে আগত তরঙ্গের কম্পাংক বেড়ে গেছে বলে মনে হয় এবং উৎস পর্যবেক্ষক থেকে দূরে সরে গেলে উৎস হতে আগত আলোর কম্পাংক কমে গেছে বলে মনে হবে। একে ডপলার ইফেক্ট বলে হয়। ডপলার ইফেক্ট শব্দ তরঙ্গের সাথে সাথেও অন্যান্য সকল দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্যমান বিকিরণের বেলাতেও প্রমাণিত।

এখন আমরা দৃশ্যমান বর্ণালীর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পারি যে নীল বর্ণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৪২৪ থেকে ৪৫০ ন্যানোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং অপরদিকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যায়ক্রমে বেড়ে লাল বর্ণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৬৪৭ থেকে ৭৮০ ন্যানোমিটার। তো স্বাভাবিকভাবেই পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র হতে আমরা দেখতে পারি যে কম্পাংক এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক।

\(E = hf\) এবং \(E = {hc \over \lambda}\) থেকে আমরা সহজেই প্রমাণ করতে পারি।
সূত্রানুযায়ী \(hf = {hc \over \lambda}\)
বা, \(f = {c \over \lambda}\)
এখানে \(c\) কে ধ্রুবক ধরে আমরা পাই \(f \propto {1 \over \lambda}\) ........ (i)

এখন ডপলার ইফেক্ট থেকে জানা যায় যে কোন উৎস যদি পর্যবেক্ষকের থেকে দূরে সরে যায় তখন উৎস হতে আগত আলোর কম্পাংক কমে গেছে বলে মনে হবে। এবং কম্পাংক কমে গেলে (i) নং হতে দেখা যায় যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ? রেড শিফট! রেড শিফট বা লাল অপসারণ থেকে জানা যায় যে কোন নক্ষত্র আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এডউইন হাবল।

দূরবর্তী গ্যালাক্সির নক্ষত্র থেকে আগত আলো পর্যবেক্ষণ করলে শুধু লাল অপসারণ বা রেডশিফট দেখা যায়। এতে প্রমাণিত হয় যে নক্ষত্রগুলো এবং উল্লেখযোগ্য যে গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এবং মহাবিশ্বের সব স্থান হতেই মনে হবে যে পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে গ্যালাক্সিগুলো দূরে সরে যাচ্ছে। এর থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল।

জর্জ ল্যমেত্র্'র তত্ত্বের সাপেক্ষে ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল একটি পর্যবেক্ষনমূলক প্রমাণ উপস্থাপন করেন যা হাবলের সূত্র নামে পরিচিত। হাবলের সূত্রটি হলোঃ

গ্যালাক্সিগুলো প্রতিনিয়ত প্রচণ্ড বেগে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং গ্যালাক্সিসমূহের দূরগমনের বেগ আমাদের থেকে দূরত্বের সমানুপাতিক

এখন আসা যাক আদিম পরমাণুর ব্যাপারে। ১৯৪৬ সালে বিজ্ঞানী জর্জ গ্যামো এবং তাঁর সহযোগী র‍্যালফ আলফার ও রবার্ট হারম্যান বলেন,

যদি বিশ্ব দিক নিরপেক্ষ ও সমসত্ত্ব এবং সাথে সাথে প্রসারণশীল হয় তবে নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রমশ কমে চলছে। অর্থাৎ বলা যায় যে অতীতে যখন মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যবর্তী দূরত্ব কম ছিল তখন নিশ্চয়ই মহাবিশ্বের ঘনত্ব বেশি ছিল এখনের তূলনায়। আর এভাবে আরো পেছোনে গেলে একটি সুনির্দিষ্ট সময় আগে সমগ্র মহাবিশ্বকে একটি বিন্দুসম অবস্থায় পাওয়া সম্ভব। তখন মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু একটি বিন্দুতে পুঞ্জীভূত ছিল এবং ঘনত্ব ছিল প্রায় অসীম

এই বিন্দুটির হঠাৎ করে প্রসারিত হওয়ার শুরুকেই মহাবিশ্বের বিগব্যাং বলা হয়। বিগব্যাং অনেকে ভাবে কোন বোমা বিস্ফোরণের মত কোন তত্ত্ব তবে আসলে এটি হঠাৎ প্রসারণ, কোন ব্লাস্ট টাইপ নয়।

বিগব্যাং থিওরির পরেই যে বিষয়টি নিয়ে কথা না বললেই নয় সেটি হচ্ছে Cosmic Inflation বা মহাজাগতিক স্ফীতি। Cosmic Inflation শুরু হয় যখন আমাদের মহাবিশ্বের বয়স $10^{-36}$ সেকেন্ড। তবে Cosmic Inflation স্থায়ী হয় $10^{-32}$ সেকেন্ড পর্যন্ত। এবং এই অল্প সময়েই আমাদের মহাবিশ্বের আকার পূর্বের তুলনায় $10^{26}$ গুন বেশি হয়। পরবর্তীতে যদিও Paul Steinhardt বলেন যে এই Inflation অবিরাম চলতে থাকে এবং একে পরবর্তীতে Eternal Inflation হিসাবে জেনেছি আমরা। এছাড়াও যে তিনধরণের Inflation থিওরি বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ইটার্নাল ইনফ্লেশন থিওরি। এছাড়াও Chaotic Inflation Theory ও উল্লেখযোগ্য।

রবিজে মাল্টিভার্স সম্পর্কে একটি লিখা পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছিল স্থানকালের গঠণের কারণে আমরা সহজে মাল্টিভার্স সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারিনা। অনেক খুঁজেও সেই লিখা টি পাইনাই যে কারণে নিজের স্বল্পবুদ্ধি এবং কিছুটা স্মৃতিশক্তি মিশ্রিত করে স্থানকালের ডায়াগ্রামটা বর্ণনা করছি।



উপরের চিত্রে স্থানকালের একটি ডায়াগ্রাম দেয়া আছে। যেখানে $x$ অক্ষ বরাবর সময় এবং $y$ অক্ষ বরাবর দূরত্ব। লাল রঙ এর যে বক্ররেখা দেখা যাচ্ছে সেটি হচ্ছে লাইট কোণ, এবং উল্লেখযোগ্য যে $t → 0$ এর দিকে এর ব্যাসার্ধ সর্বোচ্চ। লাইট কোণ হচ্ছে মূলত এক প্রকার পথ যেখান দিয়ে ফোটন চলাচল করে। তবে এই ডায়াগ্রাম টি মহাবিস্ফোরণের কারণ কী সেটা বলে না তাই এই ডায়াগ্রামের দূরত্ব ও সময়ের স্থানাঙ্ক পরিবর্তন করলে লাইট কোণটি হবে $45°$ । তখন নতুন ডায়াগ্রামটি হবে এমন



নতুন ডায়াগ্রামে প্রপার ডিস্টেন্সের জায়গায় দেখছি কোমুভিং ডিস্টেন্স এবং কনফর্মাল টাইম। General Covariance Law অথবা ডিফিওমরফিজম কোভেরিয়েন্স অথবা জেনারেল ইনভেরিয়েন্স ল স্থানকাল বর্ণনা করার জন্য যেকোন স্থানাঙ্ক ব্যবহার করবার পারমিশন দেয়।

নতুন ডায়াগ্রামের $x$ অক্ষের ঠিক ওপরে যে Dotted লাইন দেখা যাচ্ছে এটি লাস্ট স্ক্যাটারিং স্কেল। এটি মূলত একটি দূরত্ব বোঝায় যে দূরত্ব পর্যন্ত আমরা মহাবিশ্বকে দেখতে পারি, এবং এর আগের কোনকিছুই দেখা যায়না কেননা এই লাইন থেকেই রেডিয়েশন শুরু হয়। বলে রাখা ভালো যে লাস্ট স্ক্যাটারিং স্কেল ম্যাটার অ্যান্ড রেডিয়েশন ডিফারেনশিয়েট করে।

এছাড়াও ডায়াগ্রামে যে প্রেজেন্ট ডে হরাইজন লাইনটি আছে সেটি চলে আর্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান দ্বারা। প্রেজেন্ট ডে হরাইজনের বাইরের কোন পদার্থকে আমরা দেখতে পারবো না। এমনকি এর বাইরের কোন ইউনিভার্সকেও না। হয়ত অন্যপাশের ইউনিভার্সটি আমাদের মতই নতুবা অন্যরকম।



যেহেতু কোনভাবে পর্যবেক্ষণ করার উপায় নেই তাহলে মাল্টিভার্স কে একটি তত্ত্ব বা থিওরিই বলা যায়। কোন প্রমাণিত বিজ্ঞান নয়। এমনকি কোনভাবে পরীক্ষা করার যোগ্যও না, তবে আমাদের বিজ্ঞান এখনও অনেক কিছুরই পরীক্ষা করতে পারে নাই। সুদূর ভবিষ্যতে কী হবে, সেটার উত্তর আমি দিতে পারব না, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এত বড় কিছু চিন্তা করতেও ভয় হয় , তাই আপনার কাছেই চিন্তা করার দায়িত্বটা দিয়ে দিলাম।

এই মহাবিশ্বের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের পৃথিবী নামক গ্রহের এশিয়া মহাদেশের ছোট একটি দেশে অবস্থানরত অযুগ্ম আমি হয়ত অন্য কোন একটি ইউনিভার্সে আমার প্রেমিকার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছি... হয়ত!

Also Read

2 comments

  1. Tesla
  2. This comment has been removed by a blog administrator.